25 Nov 2024, 05:34 am

জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও কমেছে রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : চলতি বছরের গত ১১ মাসে বিদেশে গেছেন ১০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪ জন বাংলাদেশি কর্মী। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯। এ বছর কর্মী পাঠানোর সংখ্যা বাড়লেও কমেছে রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ। চলতি বছরের গত নভেম্বর পর্যন্ত রেমিটেন্স এসেছে ১৯.৫৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের চেয়ে ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ কম।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনের গতি – প্রকৃতি ২০২২ অর্জন এবং চ্যালেঞ্জ’শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। অভিবাসন নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলো মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, গত ১১ মাসে যে সংখ্যক কর্মী বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন এবং ডিসেম্বরেও যদি এই হারে কর্মী যাওয়া অব্যাহত থাকে তবে ‘অভিবাসন প্রবাহ’৮১ দশমিক ৮৮ শতাংশ বাড়বে। চলতি বছরের ১১ মাসে বিদেশে যাওয়া নারী কর্মীর সংখ্যা ৯৯ হাজার ৬৮৪। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৮০ হাজার ১৪৩। চলতি বছরের ১১ মাসে যে হারে নারী কর্মী বিদেশে গেছে সেই হার ডিসেম্বর মাসেও অব্যাহত থাকলে চলতি বছর নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়ার হার আগের বছরের তুলনায় ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়বে।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এবারও সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছেন সৌদি আরবে। সেখানে গত ১১ মাসে গেছেন ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫০৭ জন। যা মোট অভিবাসনের ৫৬ শতাংশ। এরপর গেছেন ওমানে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৪৮ জন। যা মোট অভিবাসনের ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন ৯৪ হাজার ৫৮৯ জন, সিঙ্গাপুরে ৫৯ হাজার ১৩১ জন, মালয়েশিয়ায় ২৭ হাজার ৮০০ জন এবং কাতারে গেছেন ২২ হাজার ১৮৬ জন।

নারী কর্মীদের মধ্যে চলতি বছরের ১১ মাসে ৬৬ হাজার ৩৩ জন গেছেন সৌদি আরবে। যা মোট জনশক্তি রপ্তানির ৬৬ শতাংশ। এ ছাড়া ওমানে গেছেন ১৫ হাজার ৭৫৯ জন, জর্ডানে ১১ হাজার ৭৬২ জন, কাতারে ১ হাজার ৮৮৩ জন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেছেন ১ হাজার ৫৮৯ জন নারীকর্মী।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি ১২ থেকে ১৩ টি দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এটা বাড়াতে হবে। যদিও এবার ভালো খবর হলো দক্ষিণ কোরিয়ায় বেশিসংখ্যক কর্মী পাঠানো গেছে। আবার তিন চার বছর পর মালয়েশিয়া, বাহরাইনের বাজার খুলেছে।

এবার কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, চাঁদপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, ঢাকা ও নরসিংদী থেকে সবচেয়ে বেশি কর্মী বিদেশে গেছেন। দক্ষতার দিক থেকে এবারও কম দক্ষ কর্মী বিদেশে গেছেন।

এ প্রসঙ্গে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা রামরুর নির্বাহী পরিচালক ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, এখনো সিংহভাগ কর্মী যান ব্যক্তিগত ভিসায়। কখনো আত্মীয় স্বজন বা পাড়া প্রতিবেশী যারা বিদেশে কর্মরত তাদের মাধ্যমে পাওয়া ভিসা ব্যবহার করে বিদেশ যাচ্ছেন। ফলে সেখানে দক্ষতা যাচাইয়ের সুযোগ থাকে না।

তিনি বলেন, দক্ষ কর্মী পাঠাতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বেশ কিছু প্রকল্প চলমান। রিক্রুটিং এজেন্সি বা সরকারের মাধ্যমে কর্মী পাঠানো গেলে দক্ষ কর্মীরা বিদেশ যেতে পারতেন। আর দক্ষ কর্মী পাঠানো গেলে রেমিটেন্স আসার পরিমাণ বাড়ত।

রেমিটেন্স কম আসার বিষয়ে ড. তাসনিম বলেন, কর্মী কিন্তু বেশি গেছে অন্তত গত বছরের চেয়ে। কিন্তু সে তুলনায় রেমিটেন্স কমেছে। অথচ ডলারের দাম বেশি, সেক্ষেত্রে রেমিটেন্স বাড়ার কথা।

তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রণোদনা বাড়াতে হবে। অন্তত ১০ শতাংশ বাড়ানো উচিত। ট্যাক্স পলিসির ভুল সংশোধন করতে হবে, যে কারণে হুন্ডিতে অর্থ পাঠানো বেড়েছে।

গত ১১ মাসে বিদেশে যাওয়ার সংখ্যার পাশাপাশি জীবিত বা মৃত হয়ে ফিরে আসার সংখ্যাও কম নয়। বিশেষ করে তিন হাজারের মত কর্মীর লাশ এসেছে গত ১১ মাসে। এদিকে নজর দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, এবার ৮১ শতাংশ অভিবাসন বেড়েছে। এটা অনেক বড় বিষয়। কিন্তু রেমিটেন্স সে তুলনায় আসছে না। সেটা কেন? এটা খুঁজে বের করা দরকার। সংশ্লিষ্ট ফোরামগুলোর সঙ্গে কথা বলতে হবে। অভিবাসীদের ক্ষেত্রে ন্যয় বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি এ সময় দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির ওপরে গুরুত্ব দেন। জনশক্তি রপ্তানিতে সিন্ডিকেট উদঘাটন করে জনসমুক্ষে তুলে ধরার কথা বলেন। বিদেশে অভিবাসীর মৃত্যুকে দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ছয় দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানো, সেজন্য অভিবাসীদের ব্যাংকের ওপর আস্থা ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়া, নব নির্মিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর (টিটিসি) পরিচালনায় সরকার ও এনজিওর যৌথভাবে কাজ করা, নিরাপদ অভিবাসন সুনিশ্চিত করতে তরুণদের সহযোগিতা নিয়ে অভিবাসন সম্পর্কিত মোবাইল অ্যাপগুলোর প্রয়োগে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা, অভিবাসীদের সন্দেহজনক অস্বাভাবিক মৃত্যুর কিছু কিছু ঘটনায় পুনরায় ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নেওয়া, বায়রাতে যে অভিযোগ সেল গঠন করা হয়েছে, তা দ্রুত সক্রিয় করে অভিবাসীদের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা এবং মানবপাচার সংক্রান্ত মামলাগুলো প্রসিকিউশনের হার বাড়ানো।

 

 

 

 

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 14655
  • Total Visits: 1300824
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২২শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, ভোর ৫:৩৪

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018